কক্সবাংলা রিপোর্ট :: ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কক্সবাজার শহরের শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক পুরানো শহীদ মিনারের ঘুণ গাছটি কে বা কারা কেটে ফেলছে। এ নিয়ে শহরজুড়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারি গাছ কর্তনের বিচার দাবি করছেন স্থানীয় ও পরিবেশ কর্মীরা।
কার নির্দেশে এ গাছটি কাটা হচ্ছে স্থানীয় লোকজন জানার চেষ্টা করেও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি। এ অবস্থায় বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকজন কাঠুরে একটানা গাছটির ডালপালা কেটে ফেলে। যে কোনো সময় বাকি অংশও কেটে ফেলা হবে। প্রকাশ্যে দিবালোকে এরকম কান্ড ঘটে গেলেও বনবিভাগ,পৌরসভা,জেলা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তর জেনেও না জানার ভাব করছে।
জানা যায়,কক্সবাজার শহরের শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষি পুরানো শহীদ মিনারের এই ঘুণ গাছ (শিশু গাছ)। এই ঘুণ গাছের ছায়া তলে প্রতিদিন শতাধিক দিনমজুর কাজের অপেক্ষায় আশ্রয় নেয়। ক্লান্ত পথচারিরা বিশ্রাম নেয়। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সহ পরবর্তি সকল আন্দোলন ও নানা ঘটনার কালের সাক্ষী হচ্ছে এই ঘুণ গাছ।
স্থানীয় পথচারীরা জানন,কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী ও পরিবেশবান্ধব ঘুণ গাছটি বিনা প্রয়োজনে কেটে ফেলা হচ্ছে । যা কক্সবাজার পৌরবাসীর হৃদপিন্ডে আঘাত করার সামিল।এই গাছটিতে রাস্তার অংশ পড়েনি। রাস্তা থেকে গাছটি দূরে অবস্থিত। এমন নিষ্ঠুরভাবে গাছটি কেটে ফেলা হচ্ছে।অনুমতি না নিলেও কিন্তু তারা বাঁধা দিচ্ছেন না। অথচ গাছটি বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের গেইটের লাগোয়া সামনে। গোড়া রেখে ঢালপালা কাটলেও বৃদ্ধ গাছটি আর বাঁচবে না।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানায়, একেক সময় একেক ব্যক্তি নিজেদের বনবিভাগ,পৌরসভা,কউক,জেলা প্রশাসন এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচয় দিয়ে গাছ কাটার তদারকি করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খোলতে চাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান,সরকারের অনুমতি ছাড়া বন, সড়কের পাশের ও পাবলিক প্লেসের গাছ কাটলে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১২’ পাশ করা করা হয়েছে। দেশের জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ ও পরিবেশন সংরক্ষণে সরকারি জমিতে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ সংরক্ষণ করতেই এ বিলটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
হঠাত গাছ কাটার ঘটনাটি নিয়ে দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার আলম জানান,এই গাছটি কাটার জন্য অনুমতি নেয়া হয়নি। অনুমতি না নিয়ে গাছ কাটা অন্যায়।তিনি আরও বলেন, যেই কাটুক আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কারণ এ গাছের মালিক আমরা। অন্যভাবে কেউ গাছ কাটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মোঃ নাজমুল হুদা জানান, শহরের এই গাছটি অনেক পুরানো। শহরের ঐতিহ্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণে এটি ভুমিকা রাখছে। গাছটি কারা কেন কাটছে তা জানা নেই। উন্নয়নের প্রয়োজনে কাটা হলে বনবিভাগের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। তাই বিষয়টি বনবিভাগকে দেখার দাবি করেছেন।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে,কর্ণেল ( অব) ফোরকান আহমেদ জানান, গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে ঢালপালা কাটা হচ্ছে। গোড়া থেকে পুরো গাছ কাটা হবে না।
Posted ৪:৪২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ এপ্রিল ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta